বিডি প্রাইম ডেইলি
বাংলাদেশ

ঈদে বাড়ি ফেরা হয় না তাদের!


সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে দিনের আলোর বিদায়। শুরু হয় রাতের। দিনের কোলাহল মিলিয়ে যায় ঠিক অস্ত যাওয়া সূর্যের মতোই।

চোখে মুখে একরাশ হতাশা আর আর ক্লান্তি নিয়ে প্রতিদিনকার মতো নিরাপত্তা প্রহরীদের চলে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার আয়োজন। চারদিকে সুনশান নীরবতা। এরচেয়ে বেশি নীরবতা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসের একেকজন নিরাপত্তা প্রহরীর মনে।

সামনেই ইদ। সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে আর হলো কই। বাড়ি থেকে কয়েক শ’ কিলোমিটার দূরে চলবে তাদের ঈদ আনন্দ। অবশ্য আনন্দ নাকি নিছক নিয়ম রক্ষা, এটা বলে দায়। বলছি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কথা। ঈদ আসলে সবাই ব্যস্ত বাড়ি ফেরা নিয়ে। কিন্তু তারা বাড়ি ফিরতে পারবে না। তাদের কাঁধে যে গুরুদায়িত্ব দেওয়া। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আনসার সদস্য আছে ২৫ জন। এরমধ্যে ঈদের ছুটি পেয়েছেন মাত্র ৪ জন। আর বাকিরা দিবে ক্যাম্পাস পাহারা। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তারা হয়তো পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না, কিন্তু সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটবে তাদের ঈদ। এ এক অন্যরকম ঈদ। এক ঈদে যারা বাড়ি ফিরবে, অন্য ঈদে তারা ফিরতে পারবে না। একজন রোজার ঈদে ছুটি পেলে কোরবানির ঈদে ছুটি পাবেন না। এনিয়ে তাদের আফসোস হলেও অন্য সহকর্মীরা যে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে পারছে, এতেই তাদের আনন্দ। 

ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হলো আনসার সদস্য লতিফের সঙ্গে। তিনি একটু হতাশ হয়েই বলতে শুরু করলেন, ‘পরিবারের জন্য টাকা ইনকাম করি অথচ পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করা হয় না। ঈদে বাড়ি গেলে সবার সঙ্গে দেখা হয়, তাছাড়া পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার মধ্যে একটা শান্তি আছে। আমি গত কয়েক বছর যাবত পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। ঈদের সময় ছুটি নেই না। কারণ তখন গাড়ি ভাড়া বেশি। এখান থেকে উত্তরবঙ্গে যাইতে যত ভাড়া ঈদের সময় তা আরো তিন চারগুণ বেশি হয়ে যায়। এজন্য ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। তাছাড়া সবাই যদি ঈদে বাড়ি যায়, ডিউটি দিবে কে।’ 

এসময় আরেক আনসার সদস্য বলে উঠলেন, ‘মামা, বাড়ি একটা ঠিহানা না! বাড়ি একটা ঠিহানা। তবে মামা ঈদ যেখান থেকেই করি আল্লাহ দোয়া কবুল করবো না মামা? কবুল তো করবোই। বাড়ি যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার মধ্যে আনন্দ থাকে। কিন্তু চাকরির কারণে সব ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। তবে মামা কোরবানির ঈদে আমি যেকোনো মূল্যে বাড়িতে যাবই।’ 

এবার ঈদে পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপন করবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত ১৯ জন আনসার সদস্য। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুই ঈদ। এই দুই ঈদে প্রত্যেকেই চায় পরিবারের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু কাঁধে তাদের রয়েছে গুরুদায়িত্ব। এই দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাখছে নিরাপদ। তাদের এই ত্যাগই মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একে অপরের জন্য। কেউ একজন সুখ পেতে হলে অপর আরেকজনকে ত্যাগ করতেই হবে।





Source link

Related posts

টাইমড আউটের পর বিদ্বেষ ছড়ানো ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ

ইমতিয়াজ আলি

৭১ বছরে পা রাখছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ইমতিয়াজ আলি

যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি, মিলল সাড়ে ৫ কেজি হেরোইন

ইমতিয়াজ আলি